কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা কলেজের সহকারী অধ্যাপক লাকি খাতুনের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিস্তার করেছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতার মধ্যে।
রোববার (৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় লাকি খাতুনের অপসারণ করার দাবিতে কলেজ চত্বরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, লাকি খাতুনকে কলেজ থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে এবং কচাকাটা থানা এলাকায় তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

গত শুক্রবার (২ মে) লাকি খাতুন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘Lacky Khatun’ থেকে পর্দা প্রথা নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, “চেহারা যদি এভাবে ঢাকতে হয়, আল্লাহ মুখ দিলেন কেন? পর্দা প্রথা খুবই ভয়ংকর অশিক্ষিত প্রথা। এটা আল্লাহর নামে পুরুষেরা নারীর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।” এ পোস্ট থেকে বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে ৩ মে বিকেলে সাপখাওয়া এলাকায় ‘মুসলিম উম্মাহ’র ব্যানারে বিক্ষোভ ও লাকি খাতুনের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর বিকেল ৫টায় লাকি খাতুন ফেসবুক লাইভে এসে তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি, যার ধারাবাহিকতায় রোববারের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যোগ করেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাকি খাতুনকে সমর্থন জানিয়ে লেখেন, “এখন লাকি খাতুনকে জিহাদিরা বলছে, সে নাকি তসলিমা নাসরিনের উত্তরসূরী। কেউ একটু নারীর অধিকারের পক্ষে কথা বললেই, মেরুদণ্ড সোজা করে একটু চললেই, যুক্তির কথা বললেই তাকে তসলিমা নাসরিন বলে গালি দেয় তারা। এখন জিহাদিরা লাকি খাতুনকে খুঁজছে খুন করার জন্য।”
এদিকে নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম রেজা জানান, “ঘটনার পরপরই আমরা তার বাড়িতে অভিযান চালাই, তবে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
সচেতন মহলের মতে, ধর্মীয় সংবেদনশীল বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
Leave a comment