সিলেট সংবাদদাতা :
রোমে পোপ ফ্রান্সিস’র এর মহাপ্রয়াণ উপলক্ষে এক বিশেষ স্মরণসভার সভার আয়োজন করা হয়। “The Sylhet Catholic Diocese” এর বিশপ ভবন, পরগণা বাজার, খাদিমনগর, সিলেট ৩১০৩, এর ১১৬ নং কনফারেন্স রুমে এই স্বরনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিসের বর্ণাট্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক নিয়ে আমন্ত্রিত অথিতিবৃন্দ বক্তব্য দেন।
শুক্রবার (৯মে) খাদিম নগরের বিশপ হাউজে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলা এই সভায় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খিষ্টান চার ধর্মের ধর্মগুরুরা নিজ নিজ ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে “আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ ও ন্যায় সঙ্গত বিশ্ব গড়ে তোলার পথ সুগম করে” শিরোনাম শির্ষক বক্তব্য প্রদান করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে কারিতাস ও সার্বজনীন প্রর্থনায় বিশ্বের কল্যান বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় স্রষ্টাকে স্মরন করা হয়।
এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিলো পোপ ফ্রান্সিসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের আহবায়ক মি: বনিফাস খংলা। পরে কারিতাসের মি: চন্দন রোজারিও এর ভিজুয়াল উপস্থাপনায় ‘পূণ্য পিতা প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস’র উপর একটি ডকুমেন্টারী ভিডিও ক্লিপ পদর্শন করেন’।
“আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গড়ে তোলার পথ সুগম করে।” শিরোনাম শীর্ষক আলোচনায় বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুরা নিজ ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে বক্তব্য রাখেন।
ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে বক্তব্য রাখেন সিলেট ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমির পরিচালক জনাব শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিলেট এরিয়া কো-অর্ডিনেটর ও প্রোগাম অফিসার মোঃ জাবির ইসলাম তার বক্তব্যে ‘শান্তি স্থাপনে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার বর্ননা করেন’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক তার বক্তব্য পোপ ফ্রান্সিসের মানবিক জীবন দর্শনের স্মৃতিচারণ, প্রশংসা ও প্রায়গিকতার গুরুত্ব আলোচনা করেন। বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে বক্তব্য রাখেন, মহানম ভিক্ষু, বৌদ্ধ বিহার, সিলেট। সনাতন ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে বক্তব্য রাখেন স্বামী চন্দ্রনাথা নন্দ মহারাজ, সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন । খ্রীষ্ট ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে বক্তব্য রাখেন, ফাদার জেমন শ্যমল গমেজ, সি.এস.সি.।
পোপ ফ্রান্সিসকে বলা হয় ক্যাথলিক চার্চের মহান সংস্কারক। সহনশীলতা ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা।
“পোপ ফ্রান্সিসের পুরো নাম হোর্হে মারিও বেরগোগলিও। তার জন্ম আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরেসে। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ইতালীয় অভিবাসী রেলকর্মী, মা গৃহিণী। তিনি ৮৮ বছর বয়সে ২০২৫ সালের গত ২১ এপ্রিল মারা যান”।
পারিবারিকভাবে পোপের আরও চার ভাইবোন আছেন। ধর্মীয় পথে আকৃষ্ট হওয়ার আগে, তরুণ বয়সে পোপ ফ্রান্সিস ট্যাঙ্গো নাচতেন তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে। পোপ ফ্রান্সিস দর্শন পড়েছেন এবং বুয়েন্সে এইরেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পরে সাহিত্য, মনোবিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব পড়াতেন, এরপর হন বুয়েন্সে এইরেসের আর্চবিশপ অর্জন করেছেন। তার স্বরনে এই সভার বক্তারা তার জীবনের বিভিন্ন সংস্কারধর্মী মানবিক দিক সম্বন্ধে আলোচনা করেন।
এই প্রার্থনাসভা সব ধর্মের মানুষকে এক ছাতার নিচে এনে প্রমাণ করেছে, ভিন্ন ধর্ম হলেও আমরা সবাই মানুষ এবং শান্তি ও সহমর্মিতা আমাদের সকলের মূল বার্তা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সমাপ্তি ঘোঘনা বক্তব্য প্রদান করেন সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ। বিশপ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ধর্মীয় সংলাপ ও সহযোগিতা একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্যতম ভিত্তি।”তাই সবাইকে নিজ নিজ ধর্মের আলোকে বিশ্ব মানবতা সকল জীব ও জৈবিক পরিবেশের কল্যানে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।
Leave a comment