বরগুনা সংবাদদাতা:
জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাংচুরের দুই বছর পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং আইনজীবীকেও আসামি করা হয়েছে। মামলায় ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের বরগুনা সদর উপজেলা শাখার ৮ নম্বর সদর ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সোহাগ মৃধাকেও আসামি করা হয়েছে’। এজাহারে তাঁকে জেলা যুবলীগের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বরগুনার দুজন ব্যবসায়ীকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনের ধারাও সংযোজন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) এসএম নইমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এ মামলা দায়ের করেন। নইমুল বরগুনা জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এসএম নজরুল ইসলামের ছেলে। বিএনপিতে নইমুল ইসলামের কোনো পদ-পদবি নেই বলে জানা গেছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় প্রধান আসামি বরগুনা-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে। অন্যান্য আসামিদের তালিকায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার (টুকু), বরগুনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমন। সাবেক পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, সাবেক পৌর মেয়র শাহাদাত হোসেন, আমতলীর সাবেক পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান, বেতাগীর সাবেক পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মোহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ অলি, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও আইনজীবী মজিুবুল হক কিসলু, বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহাবুবুল বারী আসলাম, সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের মধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও জাহাঙ্গীর কবির বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় ‘আক্তারুজ্জামান নামে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি গত বুধবার অন্য একটি মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে পুনরায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে’।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা জেলা আওয়ামী লীগের অফিস কার্যালয়ে কেক কেটে শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করে। পরে সেখান থেকে সবাই একত্রিত হয়ে লোহার রড, জিআই পাইপ, রামদা সহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বরগুনার বিএনপিকে উৎখাত করতে মিছিল সহকারে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এ সময় হামলা চালিয়ে তাঁরা অফিস কক্ষ ভাংচুর করে, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম ভাংচুর করে এবং সেগুলো সড়কে স্তূপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকি কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরে একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ করে।
মামলার বাদী এসএম নইমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় ওই সময় তাঁরা প্রশাসনের কাছথেকে কোনো প্রতিকার পায়নি। বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, বরগুনায় বিএনপি’র কোনো জেলা কমিটি নাই। এই মামলা করার বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়নি। মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতার নামও যুক্ত করা হয়েছে যা বিস্ময়কর। এবং মামলার বাদী
বিএনপি’র কোনো পদে নেই বলে জানা জানান তারা।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন মৃধা সাংবাদিকদের জানান, ‘এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে করা মামলা। বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ মামলা নিয়ে নানা সমালোচনা করতেছেন। এতেই বোঝা যায়, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা’।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে বুধবার রাতে মামলাটি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Leave a comment