Thursday , 22 May 2025
Home রংপুর বিভাগ সারাদেশ আকচা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো
সারাদেশ

আকচা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা:

নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দেন এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে একটি ব্রিজ করে দেবেন। কথা দিয়ে ভোট আদায় করে নিলেও কেউ কথা রাখেননি। প্রতিটি সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল একটি ব্রিজ। প্রতিশ্রুতি থেকে গেছে প্রতিশ্রুতির জায়গায়। সেটার বাস্তব প্রতিফলন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৩নং আকচা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আর দেখেনি।

স্থানীয়দের নিজস্ব অর্থায়নে টাঙ্গন নদীর উপর নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে একে বেকে পার হতে হতে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাকো দিয়ে পার হওয়া মানুষেরা।

জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতিগুলো টাঙ্গনের জলে ভেসে গেলেও আকচা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখছেন পালপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গনের তীরে একদিন একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে।

জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে দফায় দফায় পাওয়া প্রতিশ্রুতিতে আশার স্বপ্ন বুনেছে এ অঞ্চলের কৃষক, শ্রমিক ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রাতের স্বপ্ন যেমন ভোর হলেই মিথ্যা হয়, ঠিক তেমনই মিথ্যা হয়ে গেছে ১০ গ্রামের মানুষের একটি ব্রিজের স্বপ্ন।

তবে ব্রিজটি নির্মিত হলে পাল্টে যাবে ঝাকুয়াপাড়া, সেনপাড়া, পালপাড়া, বাগপুর, সিংপাড়া, সর্দারপাড়া, চরঙ্গী, দক্ষিণ ও উত্তর বঠিনা গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষের জীবনমান।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। তবে পণ্যবাহী কোন যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে না।

বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল- মোটরসাইকেল পার হলেও তিন চাকার গাড়ি চলে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকাযোগে নদী পার হতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়।

এতে প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা আর রোগীদের নিয়ে স্বজনদের পড়তে হয় বিপাকে। এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারী, রোগী ও কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ।

স্থানীয়দের দাবি, নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। নির্বাচন শেষ হলে তাদের আর দেখা পাওয়া যায় না।

বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস দিয়ে গেলেও ব্রিজ নির্মাণে কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি কেউ। তাই সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সচিন, দিলিপ, রিয়াজুল, আশরাফ, আরিফ সহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকচা ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ পালপাড়া ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে।

নদীর দুই পারেই রয়েছে পাকা সড়ক। কিন্তু নদীতে ব্রিজ না থাকায় কৃষিপণ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকার মানুষকে।

তারা আরও বলেন, এটি কৃষি প্রধান এলাকা। এখানে প্রচুর পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। কিন্তু এসব কৃষিপণ্য শহরে সরবরাহ করা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। অপরদিকে নদীর পশ্চিমে-পূর্বে রয়েছে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা প্রতিদিনই এই নদী পার হয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ব্রিজের অভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। গর্ভবতীসহ মুমূর্ষু রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেকে মারা যাচ্ছে। এমন নানান দুর্ভোগ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করলেও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নেই অবহেলিত এলাকাটির দিকে।

১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত বিএনপির মহাসচীব ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আমলগীর ও আওয়ামীলীগের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন সহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির এসেছেন, ব্রিজ নির্মাণে কথাও দিয়েছেন। কিন্তু সেই কথা তারা রাখেননি।

বৃদ্ধা কিরণ বালা ও বাচ্চাই রানী বলেন, যুদ্ধের পর থেকেই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছি। কতো দুর্ঘটনা ঘটে চোখের সামনে।

ছোট-খাট হলেও সরকার একটা ব্রিজ নির্মাণ করে দিলে আমাদের কষ্ট কমে যেত। সহজেই হাট-বাজারে তরি-তরকারি নিয়ে বিক্রি করা যেত। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদেরও সুবিধা হতো।

আক্ষেপের সুরে কয়েকজন কৃষক বলেন, জন্মের পর থেকে দেখছি মাপামাপি চলছে। কিন্তু আজও তা অফিস পর্যন্ত যাই নাই। যতই ছবি তুলে ব্রিজ আর হয় না। আমাদের মতো গরিব কৃষকদের ডাক সরকারের কানে যায় না।

শহিদুল এক বাসিন্দা বলেন, ১০-১২ গ্রামের মানুষের আসা যাওয়ার একমাত্র পথ এই সাঁকো। আমরা বহু কষ্টে আছি।

নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে ধরনা দেয় ব্রিজ করে দেবে বলে। তবে ২৫-৩০ বছরে নির্বাচনের পর কাউকে দেখিনি অন্তত একটি বাঁশ দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে।

সরকারি অনুদানে যদি এখানে একটি ব্রিজ হয় আমাদের প্রত্যেকের জন্য উপকার হয়। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টির প্রতি নজর দেবেন।

এব্যাপারে আকচা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রানী বলেন, আমরা বারবার প্রতিশ্রুত শুনে এসেছি। ব্রিজটি নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও শুনেছি। সেটা বাস্তবে পরিণত হয়নি। আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবিলম্বে ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস জানান, সাঁকোটি পরিদর্শন করেছি। এর ওপর দিয়ে বহু মানুষের চলাচল। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। জেলার কয়েকটি ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। একনেকে পাশ হলেই পালপাড়া ব্রিজের কাজ শুরু করতে পারবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories

Related Articles

সারাদেশ

আয়মা রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন

জয়পুরহাট সংবাদদাতা: জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা...

সারাদেশ

অবৈধ ইটভাটায় দখল-দূষণে বিপর্যস্ত কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: কুড়িগ্রামে ৭৬টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই চালু...

সারাদেশ

বালিয়াডাঙ্গীতে ট্রাক্টর চাপায় নিহত ১ আহত ২

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সোমবার (৫ মে) দুপুরে ধনতলা ও চাড়োল...