মাসুম বিল্লাহ্:
পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মিলনস্থল ‘নিদ্রা’। যার পরতে পরতে যেন সোনাঝরা রোদ খেলা করে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি স্থানীয়ভাবে ‘নিদ্রারচর’ নামে পরিচিত। ‘নিদ্রারচর’ বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এ সৈকতটি একদিকে সাগর, অন্যদিকে নদী এবং মাঝখানে কেওড়া ও ঝাউবনে ঘেরা সবুজ পরিবেশের সমন্বয়ে গঠিত। জোয়ার ভাটার খেলা, সবুজ ঘাসের বিস্তীর্ণ প্রান্তর এবং শ্বাসমূলের সমারোহ স্থানটির বৈচিত্র্য বাড়িয়ে তুলেছে।

চারপাশে ছোট ছোট গর্ত আর তারই মাঝে জোয়ার ভাটার পানি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। নদী অববাহিকার নোনা পানিতে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা বেলাভূমি। যা সবসময় সাগরের মুক্ত বাতাস এবং চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকদের হৃদয় বিমোহিত করে তুলেছে।
নিদ্রা সৈকতের নিকটেই রয়েছে শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। যেখানে প্রতি বছর জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিরি, ফাতরার চর এবং সোনাকাটা ইকোপার্ক পাশাপাশি অবস্থিত।

নিদ্রা সৈকতে আকাশপথে বরিশাল বিমানবন্দরে নেমে বাসে বা প্রাইভেটকারে তালতলী উপজেলা হয়ে যাওয়া যায়। সড়কপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরাসরি তালতলী উপজেলা হয়ে যাওয়া যায়। নৌপথে রাজধানী ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি বরগুনা বা আমতলীগামী লঞ্চযোগে এসে প্রাইভেটকার অথবা মোটরসাইকেলে তালতলী হয়ে সোনাকাটা ইউনিয়নে অবস্থিত ‘নিদ্রা সৈকতে’ যাওয়া যায়।
রাত কাটানোর জন্য তালতলী শহরের আবাসিক হোটেল ও জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। খাবারের জন্য এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির সবজি, নদীর তাজা মাছ, দেশি মুরগী ও দেশি গরু-ছাগলের গোশত ঘরোয়া পরিবেশের হোটেল-রেস্তোরায় রান্না হয়।

সার্বিকভাবে নিদ্রা সমুদ্র সৈকত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ এবং আশেপাশের পর্যটন স্থানের সমন্বয়ে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এটি দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।
নিদ্রার স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, নিদ্রা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্য পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম। এখানে পর্যটন অবকাঠামো উন্নত করা গেলে এটি দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে জানান অনেকে।

স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তারা বলেন, নিদ্রা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরূপ এবং বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের হৃদয় আকর্ষণ করতে সক্ষম। এখানে পর্যটন অবকাঠামোগত দিক আরো উন্নত করা হলে এটি দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে’।

বরগুনা জেলা পর্যটন উদ্যোক্তা উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফ খান বলেন, আমাদের নিদ্রা সৈকত শুধু বরগুনার জন্যই নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জন্য একটি গৌরবময় জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, কেওড়াবন, শ্বাসমূলের জঙ্গল আর সমুদ্র সব মিলিয়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্থানীয়দের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করেছি। সৈকত পরিষ্কার রাখা, আগত পর্যটকদের গাইড দেয়া এবং নিরাপত্তার কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে, স্থায়ী অবকাঠামো দরকার। যেমন টয়লেট, বিশ্রামাগার, পর্যটক তথ্যকেন্দ্র, ও হোটেল-মোটেল। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা এ জেলা প্রশাসন বিভাগে চিঠি দিয়েছি। তবে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রচারের অভাব। যদি পর্যটন বোর্ড বা জেলা প্রশাসন এটিকে ‘সরকারি পর্যটন স্পট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তাহলে এখানে বিনিয়োগ আসবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, ‘নিদ্রা সৈকতকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা এবং সুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি
Leave a comment