নিজস্ব প্রতিবেদক:
এস আলম গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও জমিসহ ১১ একর সম্পত্তি নিলামে তুলেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ঋণ এখন অনাদায়ী অবস্থায় রয়েছে বলে জানায় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১০ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে একাধিকবার বিনিয়োগ নেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঋণের পরিমাণ বেড়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এত বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েও দীর্ঘদিন কাগজে-কলমে তা নিয়মিত দেখানো হচ্ছিলো। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২(৩) ধারা অনুযায়ী বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিলামে তোলা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ঢাকার ধানমন্ডিতে ৩৩ শতক জায়গার ওপর নির্মিত একটি ভবন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার কারখানা এবং চট্টগ্রামের পটিয়া ও বন্দর মৌজার মোট প্রায় ১১ একর জমি। এসব সম্পত্তির বাজার মূল্য আনুমানিক ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী ক্রেতাদের আগামী ১৪ মে তারিখের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ এস আলম গ্রুপের একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (মাসুদ) এবং চেয়ারম্যান তার ভাই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান।
‘জামায়াতমুক্ত’ করার নামে ২০১৭ সালে বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ এস আলম পরিকল্পিতভাবে শেয়ার কিনে এবং ব্যবস্থাপনায় অনুগত পরিচালক বসিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রুপটির বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হয় বিপুল অঙ্কের ঋণ।
একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এস আলম গ্রুপ এবং সংশ্লিষ্টদের নামে উত্তোলন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় অর্ধেক। এসব ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা হয়েছিল মাত্র ৪ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য যে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গঠন করে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড। একইসঙ্গে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে এবং ব্যাংকটির স্বচ্ছতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়।
Leave a comment