নিউজ ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা মামলায় হাজির করানোর সময় হাতকড়া পরানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এবং হাসানুল হক ইনু পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেয়া এবং ট্রাইব্যুনাল চলাকালীন সময় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার সময় শাহজাহান খান তার হাতে হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়েছে। এটা আমার জন্য লজ্জাজনক এবং অমর্যাদাকর।’ তার আইনজীবীও এই বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেন। এসময় ট্রাইব্যুনালের বিচারক ‘কী হয়েছে’ তা জানতে পুলিশ সদস্যদের ডেকে পাঠান।
পুলিশ সদস্য নুরুন্নবী ট্রাইব্যুনালকে বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের এভাবে হাজির করা হয়। তখন আরেক পুলিশ সদস্য শহীদুল বলেন, প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর সময় তাদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালমন্দ করা হয়েছে এবং তোদের দেখে নেবো বলে ধমক দেয়া হয়েছে।
শহীদুল বলেন, হাসানুল হক ইনু পুলিশ সদস্যদের বলেন ‘তোদের চৌদ্দগোষ্ঠী খেয়ে ফেলবো’। হাজতখানায় এসে মিটিং করে ফের পুলিশ সদস্যদের হুমকি দেয়।
কাঠগড়ায় থাকা হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, শাহজাহান খান, কামরুল ইসলাম বলেন, না না তারা এসব বলেনি। সব মিথ্যাকথা।
জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, যদি কোনো আসামি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আর পুলিশও যাতে বাড়াবাড়ি না করে সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।
শাহজাহান খান ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘অতীতে আমরা রাজাকারদের হাতকড়া পরাইনি, আমাদের কেন হাতকড়া পরানো হয়েছে? এটা লজ্জাজনক।’ এ সময় সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘আগে এই আসামিদের হ্যান্ডকাফ ছাড়াই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। বিশেষ করে আজ কাঠগড়ায় হাজির করার পরও কয়েকজন হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় ছিলেন।’
ট্রাইব্যুনালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে আসামিদের হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরানো হয়। তবে, ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সামনের দিনে এখানে আর হ্যান্ডকাফ পরানো যাবে না, যারা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য জানতে চান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘ওনাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর প্র্যাকটিস তো এই ট্রাইব্যুনালে নেই, পরাচ্ছেন কেন?’ পুলিশের দুই সদস্য তখন বলেন, ‘আসামিদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর নিয়ম রয়েছে। আর কোর্ট রুমে আসার আগেই সেটা খোলা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা আসামিদের আজকের আচরণ নিয়ে যেটা আমাদের বলেছেন, তা বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা।’
এ সময় শাহজাহান খান বলেন, ‘প্রিজন ভ্যান থেকে নামার আগেই আমাকে পেছনে দুই হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। আর এজলাসে উঠানোর পর হ্যান্ডকাফ খোলা হয়েছে। আমি তখন আপত্তি জানিয়ে পুলিশকে বলেছি, তোমরা আমাকে নামার আগেই হ্যান্ডকাফ পরাচ্ছো কেন? তাহলে আমি কীভাবে গাড়ি থেকে নামবো? তারা আমার কোনো কথা শোনেনি।’
শাজাহান খান আরও বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের আরও ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার ন্যূনতম মর্যাদাটুকু চাই। সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এ সময় প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ দল?’
এর আগে এই মামলায় ১৭ জনকে হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাদের তোলা হয় কাঠগড়ায়। আসামিরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক দুই উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, ডা. দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, বিচারপতি এ এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক এমপি সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম ও সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া একইদিনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
Leave a comment