সাভার সংবাদদাতা:
দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ছুটির দিন ঢাকার সাভারে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাভার পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিটলা শাহজাহান।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১ টা ৪৭ মিনিটে সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনি নয়াবাড়ি ভাটপাড়া মহল্লায় স্ত্রী সেলিনা আক্তারের কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি আপত্তিকর অবস্থায় খাটের নিচে লুকিয়ে পড়েন। তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
বিটলা শাহজাহান সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনী নয়াবাড়ি ভাটপাড়া এলাকার সিরাজ সরকার ওরফে সুরুজ আলীর ছেলে। তিনি সাভার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও “আপেল ভাইয়ের দল” নামে একটি ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য।
গ্রেফতারকৃত বিটলা শাহজাহান সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া মহল্লার শুকুর মুন্সি ওরফে শুকরু কসাইয়ের ছেলে ডাকাত দলের সর্দার আপেল মাহমুদ ওরফে লেগুনা আপেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
বিটলা শাহজাহান ও লেগুনা আপেল সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ওরফে বিচি বাবার ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজীবের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইল, চাঁদাবাজি, মাদক, নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা, নকল পণ্য ও শিশু খাদ্য অবৈধ উপায়ে উৎপাদন করে বাজারজাতসহ নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গত (১৩ এপ্রিল) তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এলিট ফোর্স র্যাবের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে আপেল মাহমুদ ওরফে লেগুনা আপেলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ। রাজীবের অন্যতম দুই সহযোগী লেগুনা আপেল ও বিটলা শাহজাহান গ্রেপ্তার হওয়ায় সাভারে মিষ্টি বিতরণ করেছে এলাকাবাসী। ডাকাত সর্দার আপেল ও তার দলের সদস্য শাহজাহানের মাধ্যমে ভুক্তভোগী হয়েছেন এমন প্রত্যেকে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যুবলীগ নেতা বিটলা শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে এ তথ্য জানিয়েছেন সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা।
পুলিশ জানায়, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজনরা বেশ কিছু মামলা করেছেন। এই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদের ঘনিষ্ট সহযোগী যুবলীগ নেতা বিটলা শাহজাহান।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আপেলের সঙ্গে সাভার ছেড়ে পালিয়ে ফরিদপুরে আত্মগোপনে ছিলেন শাহজাহান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে করে ছুটির দিন শুক্রবার স্ত্রীকে বিশেষ সময় দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাভারে আসলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার স্ত্রীর কক্ষ থেকে যুবলীগ নেতা শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, সাভারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবের ক্যাডার কারাগারে থাকা কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদের ঘনিষ্ট সহযোগী পলাতক যুবলীগ নেতা শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার শাহজাহান একাধিক ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।
উল্লেখ্য, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীবের নানা অপকর্মের তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরতেন সাভারের স্থানীয় সাংবাদিক মতিউর রহমান ভান্ডারী, সোহেল রানাসহ অন্য সাংবাদিকরা। পাল্টা রাজীবের পক্ষ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার করতেন আপেল মাহমুদ ওরফে লেগুনা আপেল। রাজীবকে খুশি করতে কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদ ও আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল আলম শামীম ওরফে এস.এ শামীমের পরামর্শে হয়রানির উদ্দেশ্যে গত বছরের ১৫ই মে সাভার উপজেলা সাংবাদিক সমিতির আহ্বায়ক সোহেল রানার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে যুবলীগ নেতা শাহজাহান।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে সাংবাদিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়টি উঠে আসে এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় কিভাবে মামলাটির উৎপত্তি হলো এর বিস্তারিত তুলে ধরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। উত্থাপিত হয়নি মর্মে মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সাভার পৌরসভার জামসিং মহল্লায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষনের পর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে আপেল মাহমুদ ওরফে লেগুনা আপেল। এ ঘটনায় বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় আপেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করায় ধর্ষিতার বৃদ্ধ বাবা(৫৫) ও ধর্ষিতার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট ভাইয়ের (১৬) বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের (২০ মে) আদালতে পাল্টা মামলা করে হয়রানি শুরু করে লেগুনা আপেল। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করায় চার সাংবাদিক আব্দুস সালাম, শামীম হোসেন, মবিনুর রহমান ও লিটনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয় আপেল মাহমুদ। সেই মামলায় ডাকাত সর্দার লেগুনা আপেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিটলা শাহজাহানকে ৩ নম্বর সাক্ষী করা হয়।
এছাড়াও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে প্রকাশ্যে মারধর ও আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে আপেল মাহমুদ ওরফে লেগুনা আপেল, মহসিন বাবু ওরফে টয়লেট বাবু, কালা মামুন, ধলা সুয়েল ও বিটলা শাহজাহানের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম, কাউন্সিলর আব্দুর রহমান, ব্যবসায়ী নেতা ওবায়দুর রহমান অভি, ছাত্রদল নেতা বাবু ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বাড়িতে ডাকাতি ও মারধরের ঘটনায় লেগুনা আপেলের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই ডাকাত সদস্য শাহজাহান।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা জুলাই ও আগষ্ট মাসে সাভার ও আশুলিয়ার বাইপাইলে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীব ওরফে বিচি বাবা এবং ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিম সাইফুলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ ঘটনায় সাভার আশুলিয়ায় শতাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হন। শহীদের স্বজনরা পরবর্তীতে মামলা করেন। এসব মামলায় আসামিদের ধরতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
Leave a comment