Monday , 28 April 2025
Home প্রযুক্তি বাংলাদেশে স্টারলিংক ব্যবহার সম্বন্ধে যা অজানা
প্রযুক্তি

বাংলাদেশে স্টারলিংক ব্যবহার সম্বন্ধে যা অজানা

নিউজ ডেস্ক:

দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাদাতা স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করছে সরকার। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন।

ইতোমধ্যে, বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর জন্য স্টারলিংককে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিডা তাদের ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই গত ২৯শে মার্চ স্টারলিংককে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান বিডা কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে কী সুফল পাওয়া যাবে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে দুর্গম এলাকায় খুব সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। ফলে ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘুচে যাবে। গ্রামে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সকল কাজ করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। যেহেতু স্টারলিংক স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দেয়। তাই তার দিয়ে তা সংযুক্ত করতে হয় না। সে কারণে স্টারলিংকের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল ইন্টারনেটের আওতায় আনা সম্ভব।

এছাড়া যে কোনো দুর্যোগের পর দ্রুত যোগাযোগ প্রতিস্থাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক। আরেকটি সুবিধা হলো, গোপনীয়তা রক্ষা করে যোগাযোগ। স্টারলিংক যদি আড়িপাতার সুযোগ না দিয়ে বাংলাদেশে সেবা দেয়, তাহলে অনেকেই প্রতিষ্ঠানটির ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। তবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা ব্যবহার করা কঠিন।

বাংলাদেশে এখন যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়, তা সাবমেরিন কেব্‌লনির্ভর। অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দেয়।

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট সেবা জিওস্টেশনারি (ভূস্থির উপগ্রহ) থেকে আসে, যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে, স্টারলিংকের ৬ হাজার ৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) ওপরে কক্ষপথে ঘুরছে।স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহককে টেলিভিশনের অ্যানটেনার মতো একটি ডিভাইস (যন্ত্র) বসাতে হবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। গ্রাহক এই অ্যানটেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংকের রাউটার স্থাপন করে ইন্টারনেট সেবা পান।

স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। তবে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকে।

স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাসাবাড়িতে তাদের সেবা নিতে কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। সেখানে থাকে একটি রিসিভার বা অ্যানটেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। এটাকে স্টারলিংক কিট বলা হয়, যার মূল্য ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার পর্যন্ত (৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা)।

আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা)। তবে করপোরেট গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক কিটের দাম ও মাসিক ফি দ্বিগুণের বেশি।

তিন বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখাচ্ছে স্টারলিংক। তাদের ওয়েবসাইটে কোন দেশে তাদের সেবা রয়েছে, তা উল্লেখ করে একটি মানচিত্র পাওয়া যায়। তাতে বলা আছে, চলতি বছর বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হওয়ার কথা।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি এনে পরীক্ষা করা হয়। সে সময় তৎকালীন মন্ত্রীদের সঙ্গে স্টারলিংকের বৈঠকও হয়েছিল। তখন জানানো হয়েছিল, পরীক্ষার ফল ইতিবাচক ছিল। বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল টেলিযোগাযোগ খাতে সরকারের বিধিসম্মত প্রবেশাধিকারের (লফুল ইন্টারসেপশন) বা আড়িপাতার সুযোগ থাকবে কি না। বিগত সরকার স্টারলিংকের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছিল, আড়িপাতার সুযোগ দিতে হবে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অক্টোবরে একটি নির্দেশিকার খসড়াও তৈরি করেছে।

বিটিআরসি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবার নির্দেশিকার যে খসড়া প্রকাশ করেছে, তাতেও আড়িপাতার সুযোগ রাখার শর্ত রয়েছে। যদিও স্টারলিংক সাধারণত আড়িপাতার সুযোগ দিতে চায় না। নতুন সরকার কি আড়িপাতার ক্ষেত্রে ছাড় দেবে, নাকি স্টারলিংক শর্ত মেনে বাংলাদেশে আসবে, তা স্পষ্ট নয়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories