Wednesday , 21 May 2025
Home খুলনা বিভাগ, সারাদেশ নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
সারাদেশ

নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:

সাতক্ষীরা সচেতন নারী সমাজের উদ্যোগে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত বিতর্কিত সুপারিশমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।

আজ বুধবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সচেতন নারী সমাজের ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

সচেতন নারী সমাজ সাতক্ষীরার আহ্বায়ক গুলশানারা কামিনির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ফজিলা খাতুনের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নারী নেত্রী জয়নব পারভিন, নুরুন নেছা ইতি, রাজিয়া সুলতানা, ফতেমা খাতুন, রাবেয়া খাতুন প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনে জমা দেয়া যেসব প্রস্তাবনা সরাসরি কুরআনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। নারী কমিশনের এই সংস্কার প্রস্তাব প্রমাণ করে, এটা পতিত ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের পক্ষের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের দলিল। কাজেই এ প্রস্তাবনা শুধু বাতিলই নয়, পুরো ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ বাতিল করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করবে। “সমাজ বনাম রাষ্ট্র”এবং “ধর্ম বনাম নারী”কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এ কন্ট্রোভার্সিয়েল প্রতিবেদন। কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতিবেদনের পাতায় পাতায় ধর্মকে নারী বৈষম্যের অন্যতম কারণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেশের সকল সচেতন নারী সমাজ প্রস্তাবিত এ সুপারিশকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ জন্য বক্তারা এই প্রস্তাবনা বাতিলের পাশাপাশি পুরো কমিশন বাতিলের জোর দাবি জানান।

বক্তারা আরও বলেন, ১৭ টি অধ্যায়ে ৪৩৩ টি সুপারিশ সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠারও অধিক এ সংস্কার প্রতিবেদন পড়ে মনে হয়েছে যে, নারী সমতা, নারী উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নের মুখরোচক শব্দ দিয়ে তারা এদেশের নারী সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়। নারীদেরকে পুরুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। কমিশনের প্রস্তবনাগুলো জাতিকে চূড়ান্ত বিভাজনের দিকে ঠেলে দেওয়ার সূদুর প্রসারী একটি উদ্যোগ। এই কমিশনে সমাজের সকল শ্রেণি পেশার নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া ১০টির মতো প্রস্তাবনা সরাসরি কুরআনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কার করে সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে নারী—পুরুষের কথিত সমান অধিকার থাকবে। স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করতে পারবে। যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর করারও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

বক্তারা বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট যে, দেশ ও ইসলামের স্বার্থে এবং নারীদের স্বার্থে এ কমিশন বাতিল করতে হবে। কারণ, দেশের মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এ কমিশন দাঁড়িয়েছে। তারা পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করছে।’ বক্তারা আরও বলেন, ইসলামবিরোধী নারী কমিশনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে—তারা পবিত্র কুরআনকে টার্গেট করে কাজ করে যাচ্ছে। নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশকে অস্থিতিশীল বানানোর পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। অতএব গোটা কমিশনকেই বাতিল করতে হবে। এদের মধ্যে নাস্তিক্যবাদের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে।

বক্তারা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে; এই প্রস্তাবনা বাতিলের পাশাপাশি পুরো কমিশন বাতিলের দাবি জানান।

বক্তারা সকল পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও ধর্মীয় স্কলারদের নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ কমিটি গঠন করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নারী সংস্কার নীতিমালা প্রনয়নের জোর দাবি জানান।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories

Related Articles

সারাদেশ

ঠিকাদারের বাড়তি টাকা দাবীতে ৮ মাস স্থবির গল্লামারী সেতুর কাজ

খুলনা সংবাদদাতা: খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বারে গল্লামারী মোড়ে ময়ুর নদের ওপর দুটি স্টিল...