ঢাকা আলিয়া সংবাদদাতা:
ঢাকার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে গবেষণা করতে এসেছেন দুই বিদেশি নাগরিক ড. থমাস নিউবল্ড ও ড. শাহিন পিশবিন। তারা দু’জনই আন্তর্জাতিক গবেষক এবং নিজেদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপরিচিত।
মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার লাইব্রেরীর আরবি, ফারসি, উর্দু সাহিত্য ও ইতিহাসভিত্তিক পান্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করেন এই দুই গবেষক।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী এই লাইব্রেরীতে থাকা দুর্লভ পান্ডুলিপিসমূহ বাংলা অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল বোঝার জন্য এক অনন্য উৎস। লাইব্রেরীর দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ও সমৃদ্ধ সংগ্রহ দেখে তারা মুগ্ধ।
ড. থমাস নিউবল্ড, ইতালীয় নাগরিক। বর্তমানে তিনি ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ড. শাহিন পিশবিন ইরানের নাগরিক। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে পোস্টডক্টরাল গবেষক।
গবেষণার একফাঁকে তাদের সাথে ‘টাইমটাইডিংস’ এর প্রতিবেদকের কথা হয়। কিছু বিষয়ে তাদের থেকে জানতে চাওয়া হলে তারা অতি উৎসাহী মনে বলতে থাকেন।

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার লাইব্রেরীর খোঁজ কীভাবে পেলেন?
ড. নিউবল্ড বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান আমাদেরকে এই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরীর বিষয়ে জানান এবং তিনি নিজেই আমাদের এখানে নিয়ে আসেন’। এখানকার শিক্ষক (উপাধ্যক্ষ, প্রফেসর মোঃ আশরাফুল কবির) স্যার আমাদের লাইব্রেরীতে প্রবেশের অনুমতি দেন।
সবচেয়ে বেশি অধ্যয়ন করেছেন কোন কোন পাণ্ডুলিপিগুলো?
ড. শাহিন পিশবিন বলেন, ‘আমরা সাহিত্যের পাণ্ডুলিপিগুলোর ওপর বেশি অধ্যয়ন করেছি। এখানে না এলে জানতে পারতামনা যে বাংলাদেশে এমন একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে। এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত ও মনোরম। এখানকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সময় পেলে আবার আসার চেষ্টা করব’।
ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে থাকা বই ও পাণ্ডুলিপি গবেষণার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হতে পারে?
ড. নিউবল্ড বলেন, ‘এখানে এমন অনেক প্রাচীন ও দুর্লভ বই রয়েছে যা আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস, ইসলামি শিক্ষা ও সাহিত্য, আরবি ও ফারসি সংস্কৃতি নিয়ে যারা গবেষণা করছেন, তাদের জন্য এটি এক অমূল্য সম্পদ’।
নতুন গবেষকদের প্রতি আপনাদের বার্তা কি?
ড. শাহিন বলেন, ‘গবেষণা কেবল তথ্য সংগ্রহ নয়, এটি একটি অনুসন্ধানী যাত্রা। গবেষণার জন্য স্থানীয় ও আঞ্চলিক উৎসগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেবল আধুনিক উৎস নয়, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও বইয়ের মধ্যেই ইতিহাসের গভীরতম তথ্য লুকিয়ে থাকে। আমি নতুন গবেষকদের বলব যতটুকু সম্ভব পুরাতন বই ও পান্ডুলিপির সঙ্গে পরিচিত হও, কারণ এগুলোর মধ্যেই ইতিহাসের গভীর রূপ লুকিয়ে থাকে’।
এই দুজন আন্তর্জাতিক গবেষকের অভিমত থেকে স্পষ্ট যে, সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী শুধু জাতীয় সম্পদ নয়, আন্তর্জাতিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হতে পারে।
Leave a comment