পটুয়াখালী সংবাদদাতা:
রংপুরের ফারজানা পটুয়াখালীর কাওসারের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে স্বামি-সন্তানদের ছেড়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। কয়েকমাস রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে নতুন স্বামীর হাত ধরে চলে আসেন তার গ্রামের বাড়িতে। কিছুদিন গ্রামের পরিবেশে কাটানোর মাঝেই পারিবারিক নানা কলহের সূত্রপাত হয়। বিয়ে করার নয় মাস অতিক্রম না করতেই পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দেয় স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেল ৫টার দিকে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রণগোপালী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর দক্ষিণ যৌতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৯ মে) এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আবদুল আলীম।
আহত ওই যুবকের নাম কাওসার হাওলাদার (৩০)। তিনি ওই গ্রামের কামাল হাওলাদারের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ঢাকায় কাওসারের সঙ্গে ফারজানার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের সম্পর্ক বিয়েতে পূর্ণতা পায়। কাওসার ছিলেন ফারজানার দ্বিতীয় স্বামী। এর আগে ফারজানার সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে ভালোবেসে কাওসারকে বিয়ে করেন ফারজানা। কিছুদিন ঢাকায় থেকে সে তার স্বামী কাওসারের গ্রামের বাড়ি আউলিয়াপুর চলে আসেন।
স্থানীয়রা বলেন, কয়েকমাস আগে ঢাকায় বিয়ে করেন কাওসার। এরপর বউকে নিয়ে গ্রামে চলে আসেন। কাওসারের স্ত্রীর এর আগে বিয়ে ও দুইটা সন্তান থাকলেও সে তা গোপন রেখে কাওসারকে বিয়ে করেছে বলে শুনেছি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। আজ এ দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে আমরা বিস্মিত, মর্মাহত।
আহত কাওসার সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমাতে গেলে আমার স্ত্রী তাকে সময় দিতে বলে। কিন্তু আমি ফুটবল খেলতে যাওয়ার কথা বললে সে আমার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায় আমি ঘুমিয়ে পড়লে সে ওড়না দিয়ে চোখ বেঁধে ধারালো কিছু দিয়ে আমার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। আমি রক্ত দেখে চিৎকার করে নিচে নেমে মেঝেতে পড়ে যাই। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে।
কাওসার আরও বলেন, ঢাকায় ফারজানার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরে তাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনি। আমি জানতাম না তার আগের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। আজ ফারজানা তার বাবার বাড়ি রংপুরে যাওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটলো।
কাওসারের স্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আমার আগের স্বামীকে তালাক দেওয়ায়। আমার বাসার প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করে আমাকে বিয়ে করে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু এ বাড়িতে আসার পর থেকে কাওসার এবং তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেয় না। কাওসারের মা সবসময় আমাকে চোখে চোখে রাখে। গোসল করতে গেলেও তারা আমাকে পাহাড়া দেয়। কিছুদিন আগে আমাকে মারধর করে এবং আমার গলার চেন নিয়ে যায়।
ফারজানা আরো বলেন, ঢাকায় আমার খরচে সে নয় দশ মাস থাকছে। আমি আসবনা তারপরেও সে আমাকে জোর করে নিয়ে আসছে। এখন আবার সে আমাকে চলে যেতে বলে। সে আমাকে তাড়ানোর জন্য দা নিয়ে আসে। আমার থেকে সে সাক্ষর নিয়ে নিছে। আমাকে সে তালাক দিয়ে দিছে। আমি সবকিছুই ছেড়ে তার হাত ধরে এসেছি। সে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। তাই আমি এই কাজ করেছি। সে কেন আমার জিবনটা নষ্ট করে দিলো?
আহত কাওসারের মা বলেন, আমি দুপুরের খাবারের পর ওদের ঘরে শুয়ে থাকতে দেখে মাছ কাটতে আসছি। এর মধ্যেই ছেলের চিৎকারের শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখি।
এ বিষয়ে স্থানীয় একজন বলেন, আমি খবর শুনে দৌড়ে চলে আসি এবং কাওসারকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই। পরে তাকে আমরা হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করাই।
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আবদুল আলীম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a comment