ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
পারিবারিক বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে গাছের সাথে বেঁধে প্রায় ৩ ঘন্টারও বেশী সময় ধরে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। একজন গহবধূকে এমন নির্যাতনে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় ওই নির্যাতিত নারী মঙ্গলবার সদর থানায় মামলা করলে তার দুই ভাসুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ভূক্তভোগী নারীর মা ও স্থানীয় কয়েকজন লোক বলেন, সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে মন্তাজ মিয়ার ছেলে মোঃ হায়দার আলীর সাথে প্রায় ১৭ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। তার স্বামী হায়দার দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ সৌদি থাকেন। গত ৯ মাস আগে হায়দার দেশে এসে আবার সৌদিতে চলে যায়। স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মধ্যপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করেন।
পারিবারিক কলহ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই শশুরবাড়ির লোকজন ও ওই নারীর মধ্যে ঝগড়া হতো। পারিবারিক এই বিরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে ওই নারীর ভাসুরসহ শশুর বাড়ির লোকজন মিলে শারমিনকে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায় একটি নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে ওই নারী ও তার দুই সন্তানকে মারধোর করেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা মারধোর করার সেই ভিডিও মোবাইল ধারণ করেন। ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, অভিযুক্তরা বাড়ির আঙিনায় ওই নারী এবং তার সন্তানদের নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে মারধোর করছে।
ওই নারীর মা সাংবাদিকদের বলেন, একজন নারীকে এভাবে গাছের সাথে বেঁধে পিটানো হবে এটা কোন দেশের আইন? আমি আমার মেয়েকে নির্যাতনের দৃষ্টন্তমূলক বিচার চাই।
ভূক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, শশুরবাড়ির লোকজন আমার স্বামীর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিল কিন্তু সেই টাকা তারা ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী বারণ করায় আমি তাদের কাছে টাকা চাইনি। কিন্তু শশুর ভাসুরসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত ঝগড়া করায় আমি সোমবার বিকেলে অন্যত্র বাসা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে স্বামীর সাথে কথা বলছিলাম।
সেকথা শুনে আমার দুই ভাসুর “মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনসহ জা ও ভাতিজারা” এসে আমাকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। গ্রামের মানুষ তাদের নিষেধ করলেও তারা তা শুনেনি। পরে স্থানীয় মেম্বার এসে আমাকে উদ্ধার করে। পরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এ ঘটনায় আমি দুই ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীন, দুই জা মর্জিনা ও ময়না বেগমসহ ভাতিজা জুবায়ের, আকাশ ও সাইফুলকে আসামী করে সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ করি।
আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিচার চাই।
সুলতানপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রিপন মিয়া বলেন, শুনেছি ও নারী তার শশুরকে মারধর করেছে। এর জের ধরে তারা তাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করে। তবে আমি খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। যেই ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত ঘৃন্য।
নির্যাতিত ওই নারীর শশুর মন্তাজ মিয়া ও জা ময়না বেগম বলেন, সে বিভিন্ন সময় ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। তার বেপরোয়া চলাচলে বাঁধা দেয়ায় সে তার শশুর মন্তাজ মিয়ার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে শশুরকে মারধর করে। এরই জের ধরে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন, পারিবারিক বিরোধেরকে কেন্দ্র করে শারমিনের ভাসুররা তাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
Leave a comment