Saturday , 7 June 2025
Home ঢাকা বিভাগ, সারাদেশ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের আদি আকর্ষণ
সারাদেশ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের আদি আকর্ষণ

মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা:

মুন্সীগঞ্জের আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা চিত্র সবুজ বন-বনানী। বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশ ঝাড়, গাব গাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের মধ্যে ছিলো বেতগাছ। কাঁটাযুক্ত বেত গাছ লতার মতো হলেও এটি নরম নয়। এর ফলকে বেতফল বা বেতুইন বলে। আংগুরের মতো থোকা থোকা ফল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাকে। ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে অনেক কষ্ট শিকার করে বেতফল সংগ্রহ করে লবণ মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতো। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বেতফল কী তা খুঁজতে গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হয়।

গ্রামের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেতগাছ। তারা বেত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করেন। কৃষকের মাটি কাটার ঝুড়ি, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, খাবারের পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি তৈরি ইত্যাদি কাজে বেত ব্যবহার হয়।

শহরের অভিজাত শ্রেণীর জন্য চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেনীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কেটে উজাড় করে ফেলেছে। সাবার করে দিয়েছে বাড়ির আশপাশের ক্ষুদ্র বনগুলো। তাই গ্রাম থেকে মুন্সীগঞ্জ সদর টংগিবাড়ি লৌহজং সিরাজদিখান, শ্রীনগর উপজেলাগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান বেত।

মুন্সীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় বেতকে বেতমুড়া বলা হতো। বর্তমানে কয়েক গ্রাম হাঁটলেও একটি বেতমুড়া বা বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যায় না। বেত বনে ছিলো ডাহুক পাখির বাস। সকালে দুপুরে রাতে ডাহুক আপন মনে ডেকে যেত মন মাতানো সুরে।

বেত গ্রামের আনাচে-কানাচে ঝোপ-ঝাড়ে অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রয়েছে বাণিজ্যিক কদর। গ্রামের হাটবাজারে বিক্রির পাশাপাশি তা শহরে রপ্তানি হতো।

গত কয়েক বছর আগেও জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হাটের দিন গ্রামের কৃষক শ্রেণীর মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতো। একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কিন্তু আজ সে বেত ১৫০ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে লৌহজং বাজারের ওড়া বেতের আসবাবপত্র ব্যবসায়ী মোঃ খালেক মিঞা বলেন, তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগ থেকে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। কয়েক বছর আগেও ওড়া বা ধামার চারিদিক মজবুত করে গিঁট দেয়ার জন্য বেত ব্যবহার করা হতো। আজ বেত অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের তৈরি দড়ি বা রশি।

খালেকের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘর বাড়ি তৈরি করছে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। আগে যেখানে প্রতি বাড়িতেই বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যেত, সেখানে আজ একটি গ্রাম ঘুরলেও পাঁচটি বেতঝাড় খুঁজে পাওয়া যায় না।

তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গ্রামে এখনো যে সকল ক্ষুদ্র ঝোপঝাড় রয়েছে সেখানে বেতঝাড় বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করলে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে বলে অনেকেই মনে করেন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories

Related Articles

সারাদেশ

এইডস সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিভিন্ন ধরণের স্টেকহোল্ডারদের জন্য এসটিডি, এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে...

সারাদেশ

কালিহাতীতে ঘর থেকে নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় নিজ ঘর থেকে খোদেজা বেগম (৫৫) নামের...

সারাদেশ

পদ্মা নদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার পদ্মা নদী...

সারাদেশ

নিখোঁজের তিনদিন পর নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় নিখোঁজের তিনদিন পর এক নারীর অর্ধগলিত লাশ...